Lead poisoning: 35.5m children affected in Bangladesh
Source:
Jai Jai Dinশিশুর শরীরে ক্ষতিকারক সিসা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবেআজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সঙ্গত কারণেই শিশুদের বেড়ে ওঠা যদি নিরাপদ না হয় তবে আগামী দিনের তার প্রভাব হবে নেতিবাচক এমন আশঙ্কাই স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- শিশু পরিস্থিতির সামগ্রিক চিত্র আমলে নেওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, শরীরে ক্ষতিকারক সিসা বয়ে বেড়াচ্ছে দেশের সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশু! তথ্য মতে, এর মধ্যে ২৪ মাস থেকে ৪৮ মাস বয়সি শিশুদের শতভাগের শরীরেই সিসার উপস্থিতি পেয়েছে গবেষক দল। আর উদ্বেগজনক এ চিত্র উঠে এসেছে আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায়। গত মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন গবেষকরা। আমরা বলতে চাই, যখন শরীরে ক্ষতিকারক সিসা বয়ে বেড়াচ্ছে দেশের সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশু- তখন এই তথ্য এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রম্নত সম্ভব করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
ইউনিসেফের উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর, আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআর,বি-এর এই গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের চারটি জেলার শিশুদের রক্তে সিসার উপস্থিতি এবং তার মধ্যে ৬৫ শতাংশের রক্তে সিসার পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি।
উলেস্নখ্য, টাঙ্গাইল, খুলনা, সিলেট, পটুয়াখালী এই চার জেলায় শিশুদের দেহে সিসার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছে। এই চার জেলার পরীক্ষিত ৯৮০ শিশুর সবারই রক্তে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। এছাড়া গবেষণার তথ্য মোতাবেক, ঢাকার ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষায় সবার শরীরেই সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আমরা বলতে চাই, যে তথ্য উঠে আসছে তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে তা অত্যন্ত ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, গবেষকরা বলছেন, ছোটবেলায় সিসার প্রভাব বুদ্ধিমত্তা কমায়, মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করে, শিশুদের লেখাপড়ায় দুর্বল করে- যা ভবিষ্যতে তাদের অনেক আগ্রাসী করে তোলে। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক তা ভাবনার অবকাশ রাখে।
এমন পরিস্থিতিতে এটাও এড়ানো যাবে না- বাজারের বিভিন্ন পণ্য পরীক্ষা করে ৩৬৭টি পণ্যের মধ্যে ৯৬টিতে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। জানা যায়, চারটি শহরে স্থানীয়ভাবে তৈরি খেলনা, রং, অ্যালুমিনিয়াম ও সিলভারের হাঁড়িপাতিল, সবজি, চাল ও মসলার নমুনায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া যায়। চারটি শহরের মধ্যে আছে ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা। এছাড়া মাটি, ছাই, পোড়া মাটি ও হলুদের গুঁড়ায় সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে। তথ্য বলছে, সিসা দ্বারা দূষিত হলুদের গুঁড়া গর্ভবতী নারীর শরীরে উচ্চ মাত্রার সিসার উপস্থিতির কারণ। পলস্নী এলাকায় পরীক্ষা করা ৩০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলেও জানা যাচ্ছে।
আমরা বলতে চাই, ক্ষতিকারক সিসা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে দেশের সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশু; অন্যদিকে, গর্ভবতী নারীর শরীরেও সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে- ফলে সামগ্রিক চিত্র আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। মনে রাখা দরকার, শিশুর বেড়ে ওঠা যদি সুরক্ষিত না হয় তবে তা আশঙ্কাজনক। এটাও মনে রাখতে হবে, শিশুর বেড়ে ওঠা নিরাপদ না করতে পারলে কোনো অজর্নই সফলতা বয়ে আনবে না। তাই ব্যাপক পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা সাপেক্ষে শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়েই এমন খবরও উঠে এসেছে যে, শিশুরা নানাভাবেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। যেখানে শিশুর বেড়ে ওঠায় নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, শরীরে ক্ষতিকারক সিসা বয়ে বেড়াচ্ছে দেশের সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশু- এই তথ্য আমলে নিন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করুন। একইসঙ্গে শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।