81% technical and vocational graduates earn below Tk10,000: CPD
Source:
The Business Standardকারিগরি শিক্ষাগ্রহণকারী ৮১ শতাংশের বেতন ১০ হাজার টাকার নিচে
৬০ হাজার টাকার উপরে বেতন পান এমন কাউকে পাওয়া যায়নি জরিপে
05 October, 2024, 02:00 pm
Last modified: 05 October, 2024, 02:03 pm ইনফোগ্রাফ: টিবিএস "> ইনফোগ্রাফ: টিবিএস সরকারি বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ শেষে দ্রুত চাকরি মিললেও বেতন অনেক কম পওয়া যায় বলে উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে।ওই জরিপে দেখা গেছে, কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারীর প্রায় ৮১.৪৮ শতাংশের বেতনই ১০ হাজার টাকার নিচে। এছাড়া, ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে বেতন পান ১৪.৮১ শতাংশ, ৩০-৫০ হাজার টাকা বেতন পান ৩.৭০ শতাংশ। ৬০ হাজার টাকার উপরে বেতন পান এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জ জেলায় পরিচালিত জরিপে এ চিত্র উঠে আসে। জেলার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যন্ড কলেজসমূহ এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের ওপর এ জরিপ চালানো হয়।গবেষকরা জানান, এর আগে সাতক্ষীরা ও পঞ্চগড় জেলাতেও একই ধরনের জরিপ হয়েছে। সেখানেও প্রায় একই চিত্র উঠে এসেছে। গবেষকেরা আরও জানান, কারিগরি শিক্ষাগ্রহণ সুনামগঞ্জের তরুণদের চাকরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেলার কারিগরি শিক্ষা সম্পন্ন করা ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ছয় মাসের মধ্যে কোনো না কোনো চাকরি পেয়েছেন। বাকি ২২ শতাংশের ছয় মাসের বেশি সময় লেগেছে। গত বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জে অংশীজনদের নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় জরিপের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সভায় সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে মানসম্মত শিক্ষা। এর ওপর ভিত্তি করেই বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত হবে। "আমরা এখানে দেখছি, প্রচলিত সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা শেষে তুলনামূলক চাকরির নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। তবে বেতন কম। কীভাবে আরও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা যায়, তা বের করতে হবে। বর্তমানে দেশ একটি ইতিবাচক নতুন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে আমাদের এ সময়ের সুযোগ নেওয়া উচিত," বলেন তিনি। জরিপে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা বেশি– যার হার ৩৯ শতাংশ। প্রায় অর্ধেক (৪৯ শতাংশ) শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক কোর্সে পড়ার সুযোগ পাননি। সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কৃষি, ইলেকট্রিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং, তথ্যপ্রযুক্তি ও তৈরি পোশাক সংশ্লিষ্ট বিষয় বা কোর্সে পড়েছেন। জরিপে প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ সাবেক শিক্ষার্থী জানান, কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতা চাকরির বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে শিক্ষার মান নিয়ে তাদের প্রশ্ন রয়েছে। যেমন— ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির সময়ে তারা যে মানের শিক্ষা পাবেন বলে প্রত্যাশা করেছিলেন, তার কিছুটা মাত্র পূরণ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত তহবিল, প্রাসঙ্গিক কোর্সের সীমিত প্রাপ্যতা, কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সামাজিক নেতিবাচক ধারণা, অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো প্রভৃতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন তারা। সিপিডি জানিয়েছে, মোট শিক্ষা বাজেটের অনুপাতে কারিগরি শিক্ষার জন্য বরাদ্দ মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে এই বরাদ্দ বাস্তবায়নের হার মাত্র ৫৭ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিকভাবে কারিগরি শিক্ষাকে কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এদিকে, কারিগরি শিক্ষায় পড়ার কারণে অনেক সময় তাদের সামাজিকভাবে হেয় ও বৈষম্যের শিকার হতে হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা। সুনামগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুলের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাজিদুল ইসলাম সজিব জানান, "কারিগরি শিক্ষায় পড়ার কারণে মানুষ নিচুঁ চোখে দেখে। এটা আমরা দেখতে পাই।" আরেক শিক্ষার্থী মো. বায়জিদ বলেন, "আমি ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করে ১ বছর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছি। অথচ আমি দেখেছি যাদের অধীনে আমি কাজ করছি তাদের চেয়ে আমার আইডিয়া পরিপক্ক এবং ভালো ফল দিচ্ছে। কিন্তু ভোকেশনালে পড়ার কারণে আমার কাজের মূল্যায়ন আমি পাইনি।"এ বিষয়ে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "দেশে অনেক সংখ্যায় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করা হলেও ভালো মানের শিক্ষা মিলছে না। কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে সামগ্রিকভাবে আর্থসামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরও বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে জবাবদিহি, স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এখানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে।" এ বিষয়ে জেলার কারিগরী শিক্ষা খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই জেলায় ভারী কোনো শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে অনেক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিলেও কাজের সুযোগ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, কারিগরি শিক্ষার জন্য কাঙ্ক্ষিত মানের শিক্ষার্থী যেমন নেই, তেমনি দক্ষ শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে।সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন— এই তিন খাতকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থান। এগুলোতে কর্মসংস্থান থাকলেও প্রক্রিয়াগুলোকে আপডেট করতে হবে। তিনি বলেন, "যেমন হাওরে মাছ অপরিকল্পিতভাবে ধরা হয়। কিন্তু হাওরকে বাঁচাতে হলে একটি নির্ধারিত সময়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে। এখন এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে কারিগরি পাঠ্যক্রম বা কোর্স তৈরি করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, আমাদের টেকসই চিন্তা করতে হবে।"গবেষণায় নেতৃত্ব দেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।তিনি জানান, "সরকার নীতিগত জায়গা থেকে কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিলেও মাঠপর্যায়ে এ কার্যক্রম অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে, কারিগরি শিক্ষার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা কম। আরেকটি বড় সংকট হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠানে যা শেখানো হচ্ছে– তার জন্য পর্যাপ্ত চাকরিরও সুযোগ নেই।"