UNICEF delivers critical medical supplies and support as dengue outbreak escalates among children in Bangladesh
Source:
Protidiner Sangbadঝুঁকিতে গর্ভবতী নারীরা সতর্ক থাকার পরামর্শচলতি বছর ডেঙ্গুতে পুরুষ বেশি আক্রান্ত হলেও মৃত্যু বেশি নারীর। এর মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে গর্ভবতী নারীরা। চিকিৎসকরা বলেছেন, আক্রান্ত হলে মায়ের জটিলতা বাড়ে বহুগুণ। প্রভাব পড়ে গর্ভের সন্তানের ওপরও। অন্তঃসত্ত্বা নারীর ডেঙ্গু হলে গর্ভের সন্তানের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে উল্লেখ করে এই সময়টাতে পরিবারের সদস্যদের অনেক বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের।এদিকে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় রয়েছে আটজন, বাকি তিনজন ঢাকা সিটির বাইরে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪৮ জনে। রবিবার (২৭ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৩২৭ জন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৫১১ জনে। এর আগে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে প্রাণ হারান ৯ জন। ওই সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক হাজার ৯৬০ জন। বর্তমানে আট হাজার ২৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর ছাড়া পেয়েছেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৬৪ জন।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নারীর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা ও গর্ভের শিশুর ঝুঁকি বেশি। কারণ একজন নারী অন্তঃসত্ত্বা হলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ সময় সব ধরনের রোগের ঝুঁকিতে থাকেন তারা। এ জন্য এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য আলাদা নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সতর্ক থাকতে হবে।সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা মুশতাক আহমেদ বলেন, গর্ভাবস্থায় ও ঋতুস্রাবকালে কোনো নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে নারীরা তাদের যত্ন নেয়। কিন্তু নিজে অসুস্থ হলে গুরুত্ব কম দেয়। অসুস্থ হলে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেয় তারা। এসব কারণে হাসপাতালেও দেরি করে আসে। এতে জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে পড়ে তারা।২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ডেঙ্গুর ভাইরাস মা থেকে গর্ভের সন্তানের শরীরে যেতে পারে। বিশেষ করে গর্ভের শেষ দিকে এবং সন্তান প্রসবের সময় মা আক্রান্ত থাকলে এই সমস্যা বেশি হয়। ফলে শিশুও আক্রান্ত হয়। আর গর্ভের প্রথম দিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অগ্রিম গর্ভপাত ঘটতে পারে। শেষের দিকে হলে অ্যান্টিপারটাল ও পোস্টপারটাল রক্তপাত বেশি হতে পারে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রক্তের অনুচক্রিকা কমে যায়। আবার গর্ভাবস্থার শেষের দিকে প্রসূতি নারীর রক্তের অনুচক্রিকা কমে যায়। বিশেষ করে শেষ তিন মাসে এমনটা ঘটে বেশি। কারণ গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরে পানি কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে রক্তচাপ কমে আসে। মায়ের পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের শরীরে রক্ত চলাচল ও পুষ্টি কমে যেতে পারে। ফলে গর্ভেই শিশুর মৃত্যু হতে পারে। অথবা অসময়ে সন্তান প্রসব হতে পারে। কিংবা সন্তানের ওজন কম হতে পারে। যদি কোনো নারী গর্ভকালীন প্রথম বা দ্বিতীয় তিন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তবে সেটিও কিন্তু বিপজ্জনক। এ সময় জ্বরের কারণে মায়ের গর্ভপাত হয়ে থাকে। রক্ত বন্ধ হওয়ার যে প্রক্রিয়া, সেটা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কারো কারো দাঁতের গোড়া দিয়ে, চোখ দিয়ে, নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। গর্ভবতী মায়ের এ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে মা ও সন্তান দুজনেরই মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।অন্যদিকে, প্রতি ডেঙ্গুরোগীর পেছনে সরকারের গড়ে ব্যয় ৫০ হাজার টাকা এবং চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সরকারের ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়া এখন পর্যন্ত হাসপাতালে সেবা নেওয়া মোট রোগীর শতকরা ৭০ শতাংশ রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানান তিনি। রবিবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার করোনার মতো ডেঙ্গু চিকিৎসাও বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় খরচ দুই ধরনের হয়ে থাকে। যাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা বা প্লাটিলেট নিতে হচ্ছে তাদের চিকিৎসা ব্যয় এবং যাদের লাগছে না তাদের খরচ ভিন্ন। এর চিকিৎসায় সরকারিভাবে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। রোগী প্রতি সরকারের গড়ে ব্যয় ৫০ হাজার টাকা।এই অবস্থায় শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসামগ্রী ও সেবা সহায়তা দিচ্ছে ইউনিসেফ। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউনিসেফ জরুরিভিত্তিতে ২২ লাখ ৫০ হাজার ডলার সমমূল্যের প্রয়োজনীয় ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট এবং পেশাদারদের জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি খাতে অন্য সামগ্রী ও সেবা দেবে। রবিবার(২৭ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ।বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংকট বাড়তে থাকায় আরো একবার এখানকার শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির অগ্রভাগে রয়েছে। ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, কার্যকর তথ্য দিয়ে মানুষকে সচেতনও করার কাজেও যুক্ত রয়েছে ইউনিসেফ। এছাড়া ১৩ হাজার কিটসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসামগ্রী, কর্মীদের সক্ষমতা তৈরি, কারিগরি পরামর্শ এবং মশার প্রজননস্থল পরিষ্কার করার মতো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে অংশীদের সঙ্গে কাজ করছে।"