Lead poisoning: 35.5m children affected in Bangladesh
Source:
ajkerpatrika.comঢাকার ৮০ শতাংশ শিশুর রক্তে বিপজ্জনক মাত্রায় সিসাবাংলাদেশে সাড়ে ৩ কোটির বেশি শিশু শরীরে ক্ষতিকারক ধাতু সিসা বয়ে বেড়াচ্ছে। দেশের চারটি জেলার ৬৫ শতাংশ শিশুর রক্তে বিপজ্জনক মাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর রাজধানী ঢাকার ৮০ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা পাওয়া গেছে ৫ মাইক্রো গ্রাম বা তার বেশি। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রাম।সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ইউনিসেফ, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি) এবং পিউর আর্থ সম্মিলিতভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। আইসিডিডিআর, বির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের শতভাগ শিশুর রক্তে ক্ষতিকর ধাতু সিসার উপস্থিতি রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ ভাগ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা ৫ মাইক্রো গ্রাম বা তারও বেশি। ঢাকা শহরের ৫০০ শিশুর ওপর চালানো সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সেমিনারে আইইডিসিআরের গবেষক নওরোজ আফরিন জানান, তাঁরা টাঙ্গাইল, খুলনা, সিলেট, পটুয়াখালী এই চার জেলায় শিশুদের দেহে সিসার মাত্রা পরীক্ষা করেছেন। এই চার জেলার পরীক্ষিত ৯৮০ শিশুর সবার রক্তে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ শিশুর রক্তে সিসার মাত্রা সিডিসি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি। এদিকে পিউর আর্থ গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বক্তারা জানান, বাংলাদেশের বাজারের ৩৬৭টি পণ্যের মধ্যে ৯৬ টিতে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চারটি শহরে স্থানীয়ভাবে তৈরি খেলনা, রং, অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িপাতিল, সবজি, চাল ও মসলার নমুনায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া যায়। শহর চারটি হলো—ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা। এছাড়া মাটি, ছাই, পোড়া মাটি ও হলুদের গুঁড়ায়ও সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে। শিশুদের রক্তে সিসার উপস্থিতির সম্ভাব্য কারণ হিসেবে এগুলো চিহ্নিত করছেন গবেষকেরা। এ ছাড়া সিসা দ্বারা দূষিত হলুদের গুঁড়া গর্ভবতী নারীর শরীরে উচ্চমাত্রার সিসার উপস্থিতির কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন গবেষকেরা। পল্লি এলাকায় পরীক্ষা করা ৩০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষকেরা জানান, সিসা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করে। শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। সিসা শিশুর মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করে, শিশুকে লেখাপড়ায় দুর্বল করে তোলে। আচরণগত সমস্যা তৈরি করে এমনকি শ্রবণ ও বাক সমস্যাও তৈরি করতে পারে। এসব শারীরিক ও মানসিক সমস্যার ফলস্বরূপ শিশু ভবিষ্যতে আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন গবেষকেরা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুজ্জামান বলেন, ‘মানবদেহে বিশেষ করে শিশুদের জন্য সিসার প্রভাব মারাত্মক। এর ক্ষতিকর দিক কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, তা নিয়ে দেশে আরও গবেষণা হওয়া উচিত।’ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার জনস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন। সিসার ক্ষতিকর দিক নিয়ে সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ চলছে। তবে এটা নিয়ে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’ বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘সারা বিশ্বেই শিশুরা সিসা দূষণের শিকার। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে আমরা এটা জেনে আনন্দিত যে, বাংলাদেশে সিসা দূষণ কীভাবে কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে কাজ হচ্ছে।’