Research: 80% of Dhaka children have lead in their blood
Source:
bangi newsসমস্যা মোকাবেলায় জোর দিনমানবদেহে সিসার পরিমাণ বেশি হলে তাকে সিসার বিষক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়। এতে শরীরের প্রায় সব অঙ্গ ও তন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুদের মধ্যে এই ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্য মতে, সিসার প্রভাবে শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়, শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, শিক্ষণ ও আচরণগত সমস্যা হয়, কথা বলা বাধাগ্রস্ত হয়, বুদ্ধিমত্তা কমে যায় এবং মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয়।
বিজ্ঞাপনশিশুর রক্তে সিডিসির নির্ধারিত মাত্রা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩.৫ মাইক্রোগ্রাম। অথচ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় শিশুদের রক্ত পরীক্ষা করে ৬৫ শতাংশ শিশুর রক্তে এর চেয়ে বেশি মাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ছেলেশিশুদের তুলনায় মেয়েশিশুদের শরীরে সিসার মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে। ফলে এই অত্যধিক সিসার উপস্থিতি বাংলাদেশের শিশুদের কী পরিমাণ ক্ষতি করছে তা সহজেই অনুমেয়।জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআরবি সম্প্রতি এই গবেষণাটি পরিচালনা করে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে টাঙ্গাইল, খুলনা, সিলেট ও পটুয়াখালী জেলায় ৯৮০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করা হয়, তাতে সবার শরীরেই সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশের রক্তে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঢাকায় যে ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করা হয় তাদেরও সবার রক্তে সিসার উপস্থিতি রয়েছে। গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, বাজারের ৩৬৭টি পণ্য পরীক্ষা করে ৯৬টিতে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চারটি শহরে স্থানীয়ভাবে তৈরি খেলনা, রং, অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিল, সবজি, চাল ও মসলার নমুনায় সিসা শনাক্ত হয়েছে। শহর চারটি হলো—ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা। এ ছাড়া মাটি, ছাই, পোড়ামাটি ও হলুদের গুঁড়ায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ৩০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তে মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা পাওয়া গেছে। সিসাদূষিত হলুদের গুঁড়ার সংস্পর্শে তাদের রক্তে সিসার পরিমাণ বেড়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আজকের শিশুরা আগামী দিনের নাগরিক। তারাই সব কিছু পরিচালনা করবে। তাদের উপযুক্ত উপায়ে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। আমরা কি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছি? বাজারে এত বেশি পণ্যে সিসার এমন ক্ষতিকর উপস্থিতি কেন? শিশুরা যে খেলনা নিয়ে খেলছে তা-ই তাদের সর্বনাশ করছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। এই প্রশ্নগুলোর সদুত্তর থাকতে হবে। ৬৫ শতাংশ শিশুর রক্তে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতিকে গুরুতর জাতীয় সমস্যা হিসেবেই দেখতে হবে। সেভাবেই এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ইউনিসেফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থারও সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। আমরা কোনোক্রমেই চাই না আমাদের শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হোক, শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা নানা ধরনের অক্ষমতার শিকার হোক।